৩০ মে তারিখে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘গোপন কক্ষে একজন করে ‘ডাকাত’ দাঁড়িয়ে থাকে, এটাই ইভিএমের চ্যালেঞ্জ’ (প্রথম আলো, ৩০ মে ২০২২)। এমতাবস্থায় ভোটার শনাক্তকরণের পরে যেখানে ডাকাতরা ‘বাটন’টি টিপে দেন, সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারিগরি উৎকর্ষতার ইভিএমও স্বচ্চ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। বাংলাদেশের ভোটারদের অবিশ্বাস জেগেছে যে, মূলত ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচন পরিচালনা করে, নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবহ! ইভিএমের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এবং ভোট ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাটা আছে কিনা সেটা। বিষয়টি শুধুই কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিকও। রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার বিষয়গুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) – এর কারিগরি দলের সাথে দীর্ঘসময় কাজ করে আমি ইভিএম এর নয়টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছি।
এক- নিখুঁত এনআইডি এবং বায়োমেট্রিক তথ্যশালাই এখনও তৈরি হয়নি!
সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের নিখুঁত বায়োমেট্রিক তথ্যশালা ঠিকঠাক তৈরি হয়নি বলে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিষয়ক লক্ষ লক্ষ অভিযোগ আছে। এনআইডিতে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি সংলাপে বলেছেন, ‘ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে, আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। এটা নিয়ে বিপদে পড়ছি। নামের বানানে এটা ওটা মিলছে না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুবান্ধবের ৪০-৫০টা সংশোধন করে দিয়েছি’ (আমাদের সময়, ১৯ জুলাই ২০২২)।
নতুন সমস্যা হচ্ছে, প্রায় কোটি নাগরিকের জন্মনিবন্ধনের তথ্য হারিয়ে যাওয়া। ‘ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ কোটি জন্মনিবন্ধন একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে’ (জনকণ্ঠ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। ২০২৩ সালের মধ্যে কোটি নাগরিকের জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি তৈরি-সহ, বিদ্যমান এনআইডির কোটি ভুল শুধরানো অসম্ভব। যেখানে নিখুঁত এনআইডি এবং বায়োমেট্রিক তথ্যশালাই তৈরি হয়নি, সেখানে অর্ধেক (১৫০) আসনে ইভিএমে ভোটের যৌক্তিকতা কোথায়?
দুই- যন্ত্রটি বায়োমেট্রিক সঠিকভাবে নেয় না!
কায়িক পরিশ্রম, গৃহস্থালি কাজ, অপরাপর শ্রমঘন কাজের সাথে যুক্ত নাগরিক এবং বয়স্কদের আঙুলের ছাপ ইভিএমে না মেলার বহু অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ইভিএম ভোটযন্ত্রে প্রায়ই কৃষক শ্রমিক বয়স্কদের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ সম্ভব হয় না। এতে বুথে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় এবং ভোটদানের হার কমে যায়।
তিন- একটি কেন্দ্রের সব বুথের মাস্টার ডেটাবেজ নেই!
একটি কেন্দ্রের ভোটারদেরকে ভোটার ক্রমিক নাম্বারের ভিত্তিতে একাধিক পোলিং বুথে ভাগ করা হয়। নির্দিস্ট ‘পোলিং কার্ড’ দিয়ে শুধু ঐ নির্দিস্ট ভোটারদের বায়োমেট্রিক তথ্যই একটি ইভিএমে স্থানান্তর করা হয় কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে। অর্থাৎ একটি কেন্দ্রের সব ভোটারের তথ্য ঐ কেন্দ্রের সব ইভিএম কিংবা একটি বিকল্প ইভিএমে থাকে না বলে, একটি বুথের ইভিএম হ্যাং করলে, ইভিএম নষ্ট হলে, কিংবা একটি ইভিএমের ভোটারের বায়োমেট্রিক শনাক্ত করা না গেলে ভোটারকে অন্য ইভিএমে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় না। ডিজিটাল হলেও ইভিএম আর্কিটেকচার সত্যিকার অর্থেই ভোটার অবান্ধব। এদিকে কমিশনের আয়োজিত ডেমো সুবিধা অপ্রতুল, সেখানে কেউ যায় না।
চার- কর্মকর্তাদের ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দেওয়া!
অনেকের আঙুলের ছাপ ইভিএম পড়তে পারে না বলে প্রিসাইডিং অফিসার ও কারিগরি কর্মকর্তাদের ইভিএমকে ওভাররাইট (যদি কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলে তখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ব্যালট চালু করে দেওয়ার যে পদ্ধতি) করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, এটা বিপর্যয়কর। জাতীয় নির্বাচনে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘চেক এন্ড ব্যাল্যান্সহীন’ অনধিকার চর্চার সুযোগ দেয়া আছে বলে অভিযোগ আছে। বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে ২৫% ক্ষেত্রে ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ ফেনী কিংবা বগুড়ার অল্প কিছু নির্বাচনী এলাকা ছাড়া অধিকাংশ সংসদীয় আসনই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এর নির্বাচনী ফলাফলের ভোট বিন্যাসে দেখা যায় প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মোট ভোটের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। অন্য কোনো জালিয়াতি না থাকলেও শুধু কর্মকর্তাদের ইভিএম ওভাররাইটই ফলাফল পরিবর্তনের প্রধানতম হাতিয়ার হতে পারে!
পাঁচ- ইন্টারনেট সংযুক্ত না থাকলেও ইভিএমকে দূর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি?
ইভিএম ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তাই যন্ত্রটিকে ভার্চুয়ালি ম্যানুপুলেট করা অসম্ভব, এই ধারণাটিও ভুল হতে পারে। ইভিএম ইন্টারনেটে সংযুক্ত নয়, তবে ইন্ট্রা-নেটে সংযুক্ত। অর্থাৎ যন্ত্রগুলো নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সিংঙ্ক্রোনাইজেশান করে। ‘বিশেষ প্রভাবশালী’ গোষ্ঠী চাইলে প্রাইভেট নেটওয়ার্কেরই অন্য কম্পিউটার থেকে ইভিএম নিয়ন্ত্রন সম্ভব। যেহেতু ভোটের ফলাফল হস্তান্তর ‘অডিট কার্ডের’ প্রয়োজন হয়, তাই কার্ডগুলোর সঠিকতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ‘অডিট কার্ড’ কয় সেট থাকবে, গোপন বা ডুপ্লিকেট কার্ড আছে কিনা তা জানার নিশ্চয়তা নেই। আগে থেকে সাজানো ফলাফলের প্রি-রেকর্ডেড ‘অডিট কার্ড’ ব্যবহার করলে যেকোনো ধরনের জালিয়াতি প্রমাণ অসম্বব।
ইভিএমের অপারেটিং সফটওয়্যার সিস্টমে ‘ওপেন সোর্স’ নয়। ফলে ভোটের দিন ঠিক কোন এলগোরিদমে ভোটের দিন ইভিএম মেশিন চলবে সেটা নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ টিমের’ বাইরে কেউ জানবে না। কমিশনারদের অজান্তেই আইটি বিভাগ ‘বিশেষ ক্ষমতাসীনদের’ দ্বারা নির্দেশিত হয়ে এলগরিদমে পরিবর্তন আনবে না এই নিশ্চয়তা আছে কি?
অডিট কার্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রের এক একটি বুথ ইভিএম থেকে ফলাফল হস্তান্তরের পরে ঐ কেন্দ্রের মিলিত ফলাফল এবং পুরো আসনের সব কেন্দ্রের সম্মিলিত ফলাফল দুটাই ম্যানুয়াল পদ্ধতির। পুরো ইভিএম ভোট প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলেও শুধু ফলাফল তৈরির ম্যানুয়াল বলে, ডুপ্লিকেট অডিট কার্ড বা আগে থেকেই রেকর্ডেড চিপের মাধ্যমে সহজেই জালিয়াতি সম্ভব। ভোট শুরু ঠিক আগে ও ভোট বন্ধের ঠিক পরে এমন লক্ষ লক্ষ ‘অডিট কার্ডের’ ডিজিটাল ফরেনসিক টেস্ট সম্ভব নয়, এই কারিগরি সক্ষমতা নির্বাচনে কমিশনের যেমন নেই, তেমনি নেই বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলেরও।
ছয়- ইভিএমে ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল নেই!
ইভিএমের একটি বড় দুর্বলতা হলো, ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইলের (ভিভিপিএটি) ব্যাকআপ নেই। যেটা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেখানকার ইভিএমে সংযুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি/ভোটার কাকে ভোট দিলেন সেটার প্রমাণ ব্যক্তি তার কাছে সংরক্ষণ করতে পারেন। ফলে ভোটের শেষে ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভোট পুনর্গণনা করা যায়।কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএমে ভিভিপিএটি না থাকায় কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনর্গণনা বা অডিট করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশন কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান দেশের ইতিহাসের সেরা প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি।
সাত- ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের ব্যবস্থা নিরাপদ নয়
ইভিএমে ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের ব্যবস্থা আছে, ডিজিটাল অডিট ট্রেইলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত হবার ঝুঁকি আছে। সোর্স কোড উন্মুক্ত নয়। নির্বাচনের ঠিক পুর্বে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্রতিটি ইভিএম মাদারবোর্ড পরীক্ষা করা, পরীক্ষা শেষে প্রত্যেক সফটওয়্যারের ডিজিটাল ছাপ (ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট) সংরক্ষণ করা দুরূহ কাজ, বলতে গেলে অসম্ভব। সবগুলো যন্ত্রের (প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র এবং লক্ষাধিক ইভিএম) হার্ডওয়্যারের লিস্ট, সার্কিট ডিজাইন, হার্ড ডিস্ক ও কার্ডের ফরেনসিক কপি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, পক্ষ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দেয়া হচ্ছে না এবং তাদের সেসব যাচাইয়ের কারিগরি সক্ষমতাও নেই (দ্য ডেইলি স্টার, ২৮ মে ২০২২)।
পেপার ব্যাকের বদলে DREs (ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর সমস্যা হচ্ছে, ভোটের রেকর্ড ভবিষ্যতে বের করে ফেলার ঝুঁকি। ভোটারের গোপনীয়তার জন্য শুধু পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশাই যথেষ্ট নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন (জিডিপিয়ার) এর আদলে বাংলাদেশে জনগণের গোপনীয়তা সুরক্ষা আইন নেই বলে, ডিজিটাল অডিট ট্রেইল ঝুকিপূর্ণ। ২৪ জুলাই ২০২২ পটুয়াখালীতে এক সরকারদলীয় নেতা বলেছেন ‘ভোট হবে ইভিএমে, কে কোথায় ভোট দেবে তা কিন্তু আমাদের কাছে চলে আসবে’। এরকম বক্তব্য আমরা চট্রগ্রামেও শুনেছি। অর্থাৎ যেকোন ডিজিটাল ব্যবস্থা লগ ও রেকর্ড তৈরি করে বলে কাগজের ব্যালটের মৌলিকত্ব ও গোপনীয়তা ইভিএম দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না।
প্রযুক্তিবিদ সাইফুর রহমানের মতে, সিস্টেমকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম মনিটরিং সফটওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ। ভোট চলাকালীন অবস্থায় কেন্দ্রের কেউ ইভিএমের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করেন বা অসদুদ্দেশ্যে কোনো প্রোগ্রামিং স্ক্রিপ্ট প্রবেশ করান, তাহলে তা সংকেত এবং এসএমএস দিয়ে সব পক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট বন্ধ করার ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইভিএমে নেই।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, ইভিএম নিরাপত্তার ওপর আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা, সফ্টওয়্যার অডিট, বায়োমেট্রিক সিস্টেমের অডিট, ভোটিং মেশিন উত্পাদনের প্রক্রিয়া অডিট এবং ট্যাবুলেশন সফ্টওয়্যার অডিট-সহ বিভিন্ন পাবলিক সিকিউরিটি পরীক্ষার আয়োজন করা দরকার। প্রোগ্রামিং সোর্স কোডটিও খুলতে হবে যাতে যে কেউ অ্যাক্সেস পেতে পারে, অর্থাৎ মেশিনকে ওপেন সোর্স করতে হবে। EVM-এর সাথে VVPAT প্রবর্তন করতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে ভোটাররা তাদের ভোট সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে তা নিজেরাই যাচাই করতে পারবে। এবং অবশেষে, নির্দিষ্ট একটা শতাংশ হারে প্রদত্ত ভোটের ওপর বাধ্যতামূলক VVPAT স্লিপ-ভিত্তিক অডিট চালু করা দরকার (দ্য ডেইলি স্টার, ২৬ জুন ২০২২)।
আট- ইভিএম হ্যাং করে
মাঠ পর্যায়ের প্রিজাইডিং অফিসারদের তথ্যমতে, ইভিএমের একটা বড় ত্রুটি হচ্ছে মেশিন হ্যাং হওয়া। ভোট পরিবর্তন করতে, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক ব্যালটে ভুলে চাপ দিলেই ইভিএম হ্যাং করে যায়। একবার হ্যাং করলেই ৫-১০ মিনিট নষ্ট হয়, যন্ত্র পুনরায় সিনক্রোনাইজেশান বা রিস্টার্ট দিতে হয়। এতে ভোটগ্রহণের হার কমে যায়।
নয়- ইন্টিগ্রেটেড রেজাল্ট তৈরির সুযোগ নেই, ভোটদান ডিজিটাল কিন্তু ফলাফল তৈরি ম্যানুয়াল কেন?
‘ভোট প্রদানের তথ্য’ অডিট কার্ডে এনে পরে ভোটের ফলাফল হাতে তৈরি করা হয়। সব বুথ থেকে ফলাফল ম্যানুয়ালি নিয়ে, ম্যানুয়ালিই কেন্দ্রের ও আসনের ফলাফল তৈরির পদ্ধতি একদিকে হাস্যকর এবং অন্যদিকে জালিয়াতপ্রবণ। সবকেন্দ্রের ইন্টিগ্রেটেড ফলাফল তৈরি করতে বর্তমান ইভিএম সক্ষম নয়। ডিজিটাল ভোটের নামে চালানো হলেও ইভিএমের ফলাফল তৈরি স্বয়ংক্রিয় নয় বরং জঞ্জালপূর্ণ। ইভিএমের অপরাপর সব প্রক্রিয়া ডিজিটালি স্বচ্ছ হলেও অডিট কার্ডের মাধ্যমে বুথ ফলাফল হস্তান্তরের পরে ম্যানুয়াল ফলাফল তৈরির কাজ সমুদয় ইভিএম ব্যবস্থাকে বিরাট শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচনের সক্ষমতা আসলে কমিশনেরই নেই। ২০০৭ থেকে দেড় দশকে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের পর কমিশন ‘ইভিএম ভোটের’ সক্ষমতাকে ৬ থেকে ৭৫টিকে উন্নীত করেছে। সেখানে মাত্র এক বছরেই এই সক্ষমতা ‘সব সঠিকতা’ নিশ্চিত করে দ্বিগুণ করা অসম্বব। ইভিএম ভোট শুধু বিদেশ থেকে ইভিএম যন্ত্র কেনার বিষয় নয়, বরং এখানে নষ্ট মেশিন প্রতিষ্ঠাপন, কারিগরি ত্রুটি শোধরানো, দক্ষ টেকনেশিয়ান তৈরি, ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহণ, মজুদকরণ, নিরাপত্তা বিধান, কমিশন ও কমিশনের বাইরের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মত বিশদ কর্মযজ্ঞের বিষয় আছে। সুজনের হিসেবে সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে চাইলে অন্তত আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। বর্তমান ডলার সংকটে নতুন করে এত বিশাল পরিমাণ ডলার ব্যয়ের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাও দাঁড়ায় না।
- জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের উপযোগিতা’ শীর্ষক সুজনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধ অনুসারে।