Close

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও আরাকান বিচ্ছিন্নতার প্রশ্নে বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলগত অবস্থান কী?

যে কোনো ভুল অনুমান চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের সঙ্গে দর-কষাকষিকে কঠিন করে তুলবে। সঠিক কৌশল নিতে বাংলাদেশকে তার সাবেক ও বর্তমান সর্বোচ্চ সামরিক ও কূটনৈতিক ‘মেধাবী’দেরকে জড়ো করতে হবে। সত্যিকারের দেশীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসতে হবে, যারা আসলেই দেশপ্রেমী কিংবা বাংলাদেশের আসল বন্ধু।

আরাকান ও মিয়ানমারের দিক থেকে একটা সম্ভাব্য বড় বিপদ ধেয়ে আসছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশ-বিদেশের অনেকেই। সীমিত সম্পদের অতি জনবহুল দেশে সাড়ে ১১ লাখ বড় ধরণের শরণার্থীর বড় আপদ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উপর আছে। আবাসন, খাদ্য পানীয় ঔষধ সরবরাহ , সামাজিক নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সহ পরিবেশ বিপর্যয় সবকিছু আমলে নিয়ে রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন খুব জরুরি। নতুন আপদ সীমান্ত অঞ্চলে তাদের অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোর মধ্যকার যুদ্ধ, গোলাগুলি, ধেয়ে আসা গোলাবারুদ এবং উপর্যুপরি বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন। স্পষ্টতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরাকান আর্মির তৎপরতা সাথে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে, পাশাপাশি নতুন শরণার্থী প্রবাহ তৈরির চেষ্টাও হচ্ছে। জান্তা সমর্থিত বার্মিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কাগুজে ও শরীরী প্রতিবাদ ছাড়া দৃশ্যত কিছুই করতে পারছে না ঢাকা। 

প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন  এবং আরাকান আর্মির তৎপরতা প্রশ্নে বাংলাদেশের জাতীয় কৌশল আছে কি, যেটা কিনা কূটনৈতিক অংশীদারদের সাথে দরকষাকষির প্রশ্নে উত্তীর্ণ! জাতীয় কৌশল নেই বলেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব ব্যক্তিগত কূটনীতি দিয়ে এই সমস্যার কূলকিনারা করতে পারছে না। স্পষ্টতই মনে হচ্ছে, একমুখী রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে এটাকে যত বেশি ‘ডিল’ করার চেষ্টা হচ্ছে সমস্যাটা ততই গভীর হচ্ছে। বিষয়টা প্রথমেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির অর্থাৎ ভূরাজনৈতিক এবং দ্বিতীয়ত সামরিক। এর একটা বড় অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ছিল যেটা সময়ের সাথে গৌণ হতে যাচ্ছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। 

বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে আরাকান সংকটের স্টেইকহোল্ডার কারা, কার লক্ষ্য কি! এবং লক্ষ্য গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কোথায় ও কিভাবে ‘বেষ্ট ফিট’ করবে? 

১। মিয়ানমার জান্তা : নাগরিকত্ব অস্বীকার করে জান্তা আসলে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার চায়। জাতিগত নিধনের মাধ্যমে বার্মিজ রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের গণবিলুপ্তিই তাদের প্রধানতম চাওয়া। রোহিঙ্গাদের বসতভূমি, চাষের জমি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর ইত্যাদি উপরপাওনা। 

২। চীন : মিয়ানমারের রাজনীতিকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তার সেনাবাহিনী। এই অবস্থান মেনেই বার্মিজ জান্তাকে হাতে রাখতে রোহিঙ্গা প্রশ্ন চীনের কাছে গৌণ, অর্থাৎ চীনের কাছে রোহিঙ্গারা খরচযোগ্য।  রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা রাখাইনদের জাতিগত নিধন প্রশ্নে চীন চোখ বন্ধ করে রাখে, জাতিসংঘে জান্তা বিরোধী প্রস্তাবে ভেটো দেয়।  

অভিযোগ আছে চীনের চাপে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তড়িঘড়ি একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছে। যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিসংঘ কিংবা কোন আন্তর্জাতিক পক্ষকে জড়িত করা হয়নি। রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও প্রত্যাবাসন  শুরুর কোন ইঙ্গিত নেই, বরং প্রতীয়মান হচ্ছে যে, চুক্তিটির মাধ্যমে চীন বাংলাদেশকে ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে ধোঁকা দিয়েছে। ভাসানচর প্রশ্নে চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশলকে টেক্কা দিয়েছে হয়ত, কিন্তু সেখানেও জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক পক্ষ গুলোর সংযোগ দুর্বল বলে পুরো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনাই পরিত্যক্ত করা হয়েছে। বৈদেশিক সমর্থন নির্ভর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বহনের শর্তে চীনের সাথে ২০১৮ সালের রাতের ভোটের একতরফা নির্বাচনে সমর্থন যুগিয়েছে বলে গুরুতর সন্দেহ ও অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ একদিকে চীন বাংলাদেশের সাথে প্রতারণা করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও আত্মঘাতী কাজ করেছে।   

৩। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : এশিয়া-প্যাসিফিক ও অর্থনৈতিক বিশ্বে চীনের ক্রমাগত উত্থানের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুবিধ সামরিক, বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ত্বগত মোকাবেলার কৌশল আছে। দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান, হংকং, কোয়াড কিংবা চীনকে প্রযুক্তিগত মোকাবেলার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর-আরাকান কেন্দ্রিক নতুন একটি মার্কিন ফন্ট খোলার পরিকল্পনা কিংবা চেষ্টা আছে কিনা সেটা সামরিক ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে গভীরভাবে যাচাই করা দরকার।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সক্রিয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনার প্রধানতম দাতাও। রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন মোট সাহায্য বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

৪। জাপান : চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে জাপান মিয়ানমারের অর্থনীতি ও বিনিয়োগে সক্রিয়। জাপান সেনাসাশনের বদলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সচল করতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা ম্রিয়মাণ। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে জাপান সরকার অনেকটাই উদাসীন’।

৫। আসিয়ান : আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষদের প্রভাব ও ঝামেলায় মিয়ানমার নিয়ে নিরুপায়। আসিয়ান ভুক্ত দেশসমূহও  প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনঃসচল করতে চায়। জান্তার সাথে যুদ্ধ শুধুমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই হচ্ছে না বরং আরও কয়েকটি দেশের সীমান্তেও হচ্ছে। ফলে অব্যাহত অস্ত্রও মাদক চোরাচালানের পুরানো সমস্যার পাশাপাশি নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীল সীমান্ত, যুদ্ধ ও শরণার্থী সমস্যা। এমতাবস্থায় সঠিক কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন  প্রশ্নে আসিয়ানভুক্ত দেশ সমূহের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে পারে যা মায়ানমার-চীন উপর চাপ তৈরিতে কিছু ভূমিকা রাখতে পারে।  

৬। ভারত : মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কিংবা রোহিঙ্গা সংকট, দুটার কোনটারই কূটনৈতিক ও সামরিক সমাধানের বড় খেলোয়াড় নয় ভারত। এটা চীনের উঠান বলে, এখানে ভারতের কিছু করার সামর্থ্য কম। তবে হ্যাঁ ভারত আরাকানে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কালাদান বন্দরে বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যৎ  অর্থনৈতিক উপযোগিতা নিশ্চিত করতে চায়।

কোয়াডসহ চীনকে ঠেকানোর অপরাপর বিষয়ে ভারত আমেরিকার ছায়ায় কাজ করলেও আরাকান প্রশ্নে ভারতের একটা ভিন্ন দৃষ্টি থাকতে পারে। একই সাথে ভারত চীনকে বিরক্ত করতে চায় কিন্তু সে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন উপস্থিতি চায় না। মার্কিন দিক থেকে বিষয়টা পরস্পর বিরোধী বলে আরাকান ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান অস্পষ্ট। 

ইউরোপের অবস্থান অনুরোধ এবং পেপারওয়ার্ক নির্ভর। রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রশ্নে ইউরোপ সরব। তারা আমেরিকার পরামর্শেই কাজ করবে, বড়জোর জান্তাকে কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে। বান্দরবন সীমান্তে মিয়ানমারের বারবার মর্টার শেল নিক্ষেপসহ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাইন পুঁতে রাখা, মর্টার শেল নিক্ষেপে হত্যাসহ সীমান্ত সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টার আহবান জানিয়ে আসিয়ান ও আসিয়ানের বাইরের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাথে আলাদা বৈঠক হয় ঢাকায়। উল্লেখ্য যে আসিয়ানের বহির্ভূত দেশগুলোর সভায় সবাই আসলেও চীনা রাষ্ট্রদূত আসেননি, এমনকি প্রতিনিধিও পাঠাননি। চীন যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশের সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা কিংবা অবৈধ সমঝোতা করেছে এটা তারই আরেকটা ইঙ্গিত। এর কয়েকদিন আগে, কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিরা বান্দরবনে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছেন, জান্তা-আরাকান আর্মি ঠিক ওই মূহুর্তে গোলাগুলি বন্ধ করে, পরে আবারও শুরু করেছে। 

৬। আরাকান আর্মি : চীন-জান্তা বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলা একে অপরকে সাহায্য করছে বলে মিয়ানমারের বিশাল এলাকা জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে আরাকান আর্মিও শক্তি পাচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মির মূল রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) অনলাইন প্রেস কনফারেন্স করে নাটকীয় এক ঘোষণায় বলেছে, ‘আরাকানের যেকোনো বিষয়ে বৈশ্বিক সবাইকে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হবে। …রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে ইউএলএ এবং আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সে রকম হলে ইউএলএ নিজে থেকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।’ এমতাবস্থায় মার্কিনিরা আরাকান আর্মিকে সাহায্যের উপায় খুঁজছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। ইউএলএ’র ঘোষণাকে মার্কিনিরা মৌন সমর্থন দিলে জান্তা বিরোধী জোট এনইউজে এবং ‘আরাকান আর্মি’ সাথে বাংলাদেশকে একটা সমঝোতার চাপ তৈরি হবে। এতে জান্তা ও চীন সমর্থন দিবে না বলে আদতে প্রত্যাবাসন আরও কঠিন হবে। এবং বিষয়টা আরাকান বিচ্ছিন্নতার প্রশ্ন, অস্ত্র সরবরাহে সহযোগিতা, গোয়েন্দা সাহায্য ইত্যাদি বহু বিষয়ে জড়িয়ে পড়বে। 

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামে দুটি চুক্তি সই করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় হয়ে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে হয় সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়। অনেকেই মনে করেন এর সাথে আরাকান বিচ্ছিন্নতার সম্ভাব্য প্রস্তুতির সংযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক আধুনিয়াকনে ফান্ডিং এর প্রস্তাবও দিয়েছে।   

৭। অস্ত্র সরবরাহকারী : মূলত চীন-রাশিয়া ও এই বলয়ের অনুগত দেশগুলো। তারা জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। অস্ত্র বিক্রয়কারীদের তালিকার একেবারে নিচের দিকে ভারত-পাকিস্তানও কিন্তু আছে। 

৮। জাতিসংঘ : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে নিয়ে একটাই শব্দ ব্যয় করতে চাই- সেটা হচ্ছে ‘অক্ষম’। 

অনেকের মতে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান ও মূল লক্ষ্য এমন হওয়া উচিৎ যে, ‘আরাকানের বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় না দিয়েই অর্থাৎ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকে মেনেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্থায়ী প্রত্যাবাসন ও নিরাপত্তা প্রশ্নে সরাসরি জান্তাকে চাপ দেয়া। সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া প্রত্যাবাসন  না হলে বাংলাদেশ আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের দায় নিবে না।’ এজন্য বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। চীনকে সাক্ষী রেখে বার্মিজ জান্তার সাথে দরকষাকষিতে ব্যর্থ হলে বিপদ আরও বড় হবে। বাংলাদেশের অনির্বাচিত দুর্বল সরকার ক্ষমতার জন্য বিদেশি সমর্থন নির্ভর বলে তার কূটনৈতিক সক্ষমতা কম, এমনকি কৌশল পশ্চাৎপদ।   

দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, চীনকে মোকাবেলা কিংবা বিরক্ত করতে আমেরিকার সুস্পষ্ট সামরিক আকাঙ্ক্ষাকে বোঝা। ১০ বছর পরে আমেরিকা আরাকানে কোন সামরিক ভূমিকা নিবে কিনা সেটা বোঝা। এর দুটা ডাইমেনশন আছে। এক- সরাসরি টেবিলের উপরের কূটনীতি। এখানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রশ্নে মার্কিনিদের কাছে ধরা। র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা  দিয়ে তারা সরকারের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। ফলে গণতন্ত্র উন্মুক্ত করা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করে দরকষাকষির শক্তি বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কম। অন্যথায় করতে হবে টেবিলের নিচের কূটনীতি।

মার্কিনিদের সাথে যত বেশি আন্ডার-টেবিল ডিল হবে, মূল লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ তত বেশি সরে যাবে। ভাসানচর, আকসা-জিসোমিয়া’র চাপ, মার্কিন অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব এবং আরাকান আর্মির ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রকৃতি নির্ণয় করে এই আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে। ঘটমান বর্তমান থেকে কয়েক বছর পরে আরাকানে মার্কিন সামরিক আকাঙ্ক্ষা আছে কিনা, কিংবা আরাকান আর্মির মাধ্যমে কোন ছায়াযুদ্ধ করবে কিনা এটা বোঝা জরুরী। 

যে কোন ভুল অনুমান চীন ও আমেরিকা দুই পক্ষের সাথে দরকষাকষিকে কঠিন করে তুলবে। সঠিক কৌশল নিতে বাংলাদেশকে তার সাবেক ও বর্তমান সর্বোচ্চ সামরিক ও কূটনৈতিক ‘মেধাবী’দেরকে জড়ো করতে হবে। সত্যিকারের দেশীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক এক্সপার্টদের সাথে বসতে হবে যারা আসলেই দেশপ্রেমিক কিংবা বাংলাদেশের আসল বন্ধু। পাশাপাশি নিজের বৈধ দরকষাকষির শক্তি বাড়াতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় সচল করতে হবে, মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে, এতে টেবিলের নিচের অবৈধ দরকষাকষির দায় ও চাপ কমে আসবে। মিয়ানমার এমন বড় সমস্যা হয়ে আসছে, এটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সামলানোর মত মামুলি বিষয় নয়। সময় কিন্তু গড়িয়ে যাচ্ছে, পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। 

তড়িৎ প্রকৌশলী, বুয়েট। টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ; বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর; অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা; বাংলাদেশের পানি, পরিবেশ ও বর্জ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Leave a comment
scroll to top