২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৯ শতাংশ। সরকারি হিসাবে গত এক যুগে ৫২ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সেবায় যুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ। সেচ গ্রাহক বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার। জানুয়ারিতে দেশে গ্রিড উপকেন্দ্র ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ২৩৪ এমভিএ। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ৫ লাখ ৯৭ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে দেশে সঞ্চালন লাইন ১২ হাজার ৬৪৭ সার্কিট কিলোমিটার। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল আট হাজার সার্কিট কিলোমিটার। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদ্যুতের সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
পিডিবি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৩ হাজার মেগাওয়াটও ছাড়ায়নি। উৎপাদনে আসছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র। লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের। পাশাপাশি বাড়বে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও। বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না আশানুরূপ হারে। পিডিবির প্রাক্কলনে দেখা যাচ্ছে ২০২৫ সালে অলস বসে থাকবে ১৫ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।
রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি লুটের ক্যাপাসিটি চার্জ
ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমসহ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনায় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা তৈরি না করায় উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ সুফল আসছে না। বরং দলীয় ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা চুক্তির ফাঁদে ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে ও যাচ্ছে।
অভিযোগ আছে যে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা অপরীক্ষিত এবং বহু ক্ষেত্রে মিথ্যা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি কোম্পানির পকেটেই গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। একটি কোম্পানির ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলোকে কখনোই সক্ষমতার অর্ধেকেও ব্যবহার করা হয়নি বা যায়নি।
এক দশকে ৬২ হাজার ৭০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে পিডিবি, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের এক-চতুর্থাংশের বেশি। ঘাটতি মেটাতে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এমনকি বিদেশি ৭ কোম্পানিও সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ১৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এক দশকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ৯ বার, এতে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে গেছে প্রায় ৯১ শতাংশ। যদিও এক দশকের মধ্যে কয়েকবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমেছে। এর মধ্যে গত দুই বছর টানা কমছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়, যার কোনো প্রভাব নেই গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দামে।
অলস বিদ্যুৎ তবুও নতুন কেন্দ্র এবং আমদানি
৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অলস থাকার পরও ভারতের পাঁচটি উৎস থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। যদিও চাহিদা না থাকায় আমদানি সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। এরপরও ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে নতুন আমদানির চুক্তি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য।
শীতকালীন নিম্ন চাহিদার মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সারপ্লাস প্রায় ৬০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ ১০০ ভাগের মধ্যে ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাই অলস বসে ছিল। গ্রীষ্মে অলস বিদ্যুৎ কিছুটা কমে আসবে, তবে ৫০ শতাংশের নিচে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিপিডিবি তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে বিদ্যুৎ খাতের স্থাপিত সক্ষমতা ২১ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৭৪৮ মেগাওয়াট।
কিন্তু বিপুল পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে ১৮ জানুয়ারি ২০২১ সন্ধ্যার পিক আওয়ারে উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ২৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। গত গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ পিক ছিল ১২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট (৫৯ শতাংশ)। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশের মতো ব্যবহার হয়েছে। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সক্ষমতার ৪৩ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৪৮ শতাংশ ব্যবহার হয়েছিল। (সূত্র-বিপিডিবি, বণিক বার্তা ২১ জানুয়ারি ২০২১)।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। ওভারহোলিং চার্জের নামেও বেসরকারি কেন্দ্রকে ভর্তুকি দিতে হয়, যা সরকারি কেন্দ্রে নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সেমতে বর্তমানে দেশে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলে। আর ২০২৫ সালে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন সক্ষমতা লাগবে ২২ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে
‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি অ্যাকশন প্ল্যান, ২০২১-২০৪১’ শীর্ষক স্রেডা-ইউএনডিপি যৌথ প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার ৯৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সক্ষমতা হবে মোট স্থাপিত সক্ষমতার অন্তত ১০ শতাংশ।
কিন্তু বাস্তবে ২ হাজার ১২৪ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা হয়নি। সব মিলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মাত্র ৭৫০ মেগাওয়াট। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি-৭ মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ নবায়নযোগ্য রাখার শর্ত আছে।
কিন্তু বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের শক্তিশালী প্রার্থী বলে এই লক্ষ্য প্রযোজ্য নয়। বরং বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৭ শতাংশ নবায়নযোগ্য রাখার শর্ত মানা, যা নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য। প্রায় ৯৯ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুতের আওতায় এলেও বিতরণ সক্ষমতাজনিত লোডশেডিং, উচ্চ মূল্যের সমস্যা রয়ে গেছে। ফলে সবার জন্য সাশ্রয়ী, নিরবচ্ছিন্ন টেকসই, সবুজ ও আধুনিক বিদ্যুতের বৈশ্বিক অঙ্গীকার থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।
মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার
২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১২ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ভারত মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের এই ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছে ২০ বছর আগে। ভারতের বর্তমান মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রায় ১ হাজার ২৫০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। বাংলাদেশের মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার ভারতের ৪০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক গড়ের মাত্র ১৭ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে বাংলাদেশ দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে ছাড়িয়ে গেছে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন, প্রাথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুতের এত কম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ঠিক কীভাবে উৎপাদন করে? ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস স্প্রিং ২০১৮: জবলেস গ্রোথ’? প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দেখিয়েছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মহীন। মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের অতি নিম্ন পর্যায়ে, এটাও প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আসলে উৎপাদনহীনও।
এটা এই ইঙ্গিত বহন করে যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্থব্যয়, খরচ ও অপখরচকেন্দ্রিক। ঠিক যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশজ প্রবৃদ্ধি আসার কথা ছিল, তা না হয়ে একই প্রবৃদ্ধি শর্টকাট পথে হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প ব্যয়ে অপখরচ, দুর্নীতির ধারণা সূচকের বিস্তৃতি আর মাথাপিছু বিদ্যুতের কম ব্যবহারের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে উৎপাদনহীনতার সম্পর্ক টানা যায়। কর্মহীন ও উৎপাদনহীন প্রবৃদ্ধি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে যাওয়া দেশকে।
সংকট উত্তরণের সুপারিশ
১. নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চ জ্বালানি দক্ষতায় (ইফিসিয়েন্সি) একটানা চালু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম (প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর) হলেই তার স্থাপিত সক্ষমতার প্রায় ৭৫ শতাংশকে (প্ল্যান্ট ক্যাপাসিটি) পরীক্ষিত সক্ষমতা হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের আইপিপিগুলোর ঘোষিত সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে কারিগরিভাবে পরীক্ষিত নয়। ফলে এই সক্ষমতার হিসাবে বড় ধরনের গরমিল থাকার সম্ভাবনা থাকছে। অপরীক্ষিত সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে সমীক্ষা করে ক্যাপাসিটি চার্জের ভিত্তি পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। বর্তমানে মিথ্যা ও অপরীক্ষিত তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি হাতিয়ে নিচ্ছে। সারপ্লাস ও প্রতিযোগিতার সময়ে বেসরকারি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ কমে আসার কথা। এই সুযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ সংকটকালে সম্পাদিত চুক্তির চার্জ কমাতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সরকারি চুক্তি ধর্মগ্রন্থের বাণী নয় যে পুরোনো চুক্তির দোহাই দিয়ে প্রভাবশালী মহলের অলস কেন্দ্রকে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিয়ে যেতে হবে বছরের পর বছর। বেসরকারি খাতের উৎপাদনের ব্যয় কোথাও ক্যাপাসিটি চার্জসহ ইউনিট শত টাকার ওপরে উঠেছে (এপিআর, প্যারামাউন্ট বিট্রাক, প্রথম বাংলা ট্র্যাক, এগ্রিকো ব্রাহ্মণগাঁও-ওরাহাটি)। এমনকি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনেও বেসরকারি খাতে তিন গুণ ব্যয় হয়েছে কোথাও (সিম্পা, টেকনাফ, সিনগ্রিন)। এসব অপব্যয় বন্ধের রোডম্যাপ চাই।
২. শীতকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদা ৯ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট এবং গ্রীষ্মকালীন চাহিদা ১২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। অথচ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট। এমতাবস্থায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি না দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ানোর তিনটি সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে, শিল্প ও আবাসিক উভয় ধরনের বিদ্যুৎ মূল্য কমানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অফ পিক রেট চালু করা। গ্রীষ্মকালীন দৈনিক সম্ভাব্য অফ পিক হতে পারে রাত তিনটা থেকে বিকেল চার–পাঁচটা পর্যন্ত। অন্যদিকে শীতকালীন অফ পিক হিসেবে সারা দিনই আসতে পারে। মূল্য কমানো এবং অফ পিক ধারণার বাস্তবায়ন সম্পদ ব্যবহারের অপচয় কমাবে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের রাজস্ব বাড়িয়ে দেবে নিশ্চিতভাবে। তৃতীয়টি হচ্ছে, বিতরণ ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিমুক্ত সাশ্রয়ী প্রকল্প নেওয়া।
৩ দশমিক ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ অলস বসে আছে বিধায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি (ক্রস বর্ডার) কমিয়ে আনা হোক। করোনা মহামারিজনিত অর্থনৈতিক মন্দার কালে চুক্তিগুলো রিভিউ করা হোক। যেকোনো বাণিজ্যিক চুক্তি মাত্রই পুনঃ বিবেচনাযোগ্য। এমনকি আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের চুক্তিও পুনঃ মূল্যায়ন করা হোক।
৪. কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বন্ধ করা হোক। দীর্ঘদিন অলস বসে থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ ভোগের পরও আশুগঞ্জ, ভোলা, কুমারগাঁওয়ের কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো নবায়ন ঠিক কার স্বার্থে?
৫. কারিগরি খাত বলে বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঞ্চালন লস ছাড়া কোনো ধরনের সিস্টেম লস ব্যাখ্যার অযোগ্য। বৃহৎ দেশগুলো, যেখানে অতি দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে, সেখানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ (যেমন ইউএসএ) সিস্টেম লস মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু অতি ছোট দেশ হয়েও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনে এখনো পৌনে ৯ শতাংশ সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য নয়। সিস্টেম লস ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হোক।
৬. ভাসানচর, চরফ্যাশন, ভোলা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে অতি খরুচে সাবমেরিন সঞ্চালন লাইনের বিকল্প হিসেবে সেখানে সৌর-বায়ু বিদ্যুতের সমন্বয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কমিউনিটি গ্রিডের সাশ্রয়ী মডেল দাঁড় করানো হোক। দুর্নীতির পরে বায়ু–বিদ্যুতের পাইলট সফল না হওয়ার বিষয় অগ্রহণযোগ্য। দেশের অন্যত্র স্বল্প বায়ুপ্রবাহজনিত সমস্যা থাকলেও উপকূলীয় ও চরাঞ্চলে গড় বায়ুপ্রবাহ মান বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট।
৭. ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক গ্রাহক কীভাবে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবেন, তার দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো নিয়ে ভাবতে হবে এখনই।