বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এমডিজি সময়ে মানব উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির এক সফল উদাহরণ হিসেবে সমাদৃত। স্বাধীনতা পরবর্তী তিন দশকে পাকিস্তান ও ভারতের তুলনায় বিবিধ সামাজিক সূচকে (যেমন : মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, জনসংখ্যার উর্বরতা হ্রাস, শিশু টিকাদান কর্মসূচি, নারীর গর্ভনিরোধক ব্যবহার এবং জন্মদান ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান প্রীতি হ্রাস) বাংলাদেশের অর্জন সমূহ ব্যতিক্রমী। এর সবটুকুই অর্জিত হয় সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বে। সেই বিচারে এই অগ্রগতি সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশের ‘অসামান্য উন্নয়ন’ এর প্রমাণপত্র[1]।
পাকিস্তানি শাসনামলে (১৯৪৭-১৯৭১) আমাদের অর্থনীতি এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় (বিশেষত পাকিস্তান) শিক্ষাখাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিশ্চিত হয়নি মানসম্পন্ন শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার। শিক্ষা অংশগ্রহণ বাড়লেও বৃদ্ধি পাইনি স্বাক্ষর এবং কর্মদক্ষ জনশক্তি। ন্যূনতম দক্ষতাবিহীন সনদধারী জনশক্তির প্রবৃদ্ধি শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক বিচ্যুতির বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে ও নীতি প্রণয়ের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব, বিভ্রান্তি অসংগতি ও জনসম্পৃক্তির ঘাটতি; শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি এবং প্রস্তাবিত রূপরেখা বাস্তবায়নে ব্যর্থতা – এসব মিলিয়ে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বর্ষে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটি বড়ো সংকটের মুখোমুখি। এই প্রবন্ধে অগ্রগতির পাশাপাশি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মানের এবং নীতির সঙ্কট বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
শিক্ষার প্রসার এবং প্রবৃদ্ধি
বিভিন্ন অর্থ-সামাজিক গোত্রের শিশুদের স্কুলে ভর্তি করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। চার দশক আগে এক তৃতীয়াংশেরও কম শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছিল। আজ সেই সংখ্যাটা ৮০%। ছেলেদের তুলনায় শ্রেণীকক্ষে মেয়ে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ছিল খুবই সীমিত। মাধ্যমিক মেয়েরাই অধিকতর হারে ঝরে পড়তো। পাকিস্তানের তুলনায় শ্রেণীকক্ষে লিঙ্গসাম্যতা এসেছে স্বাধীনতার প্রথম তিন দশকের মধ্যে[2]। ২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির হার ছিল ৯০ শতাংশের উপরে। কিন্তু অধিক সংখ্যায় শিশু ঝরে পড়ায় প্রাথমিক চক্রের সম্পূর্ণ করার হার ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ। ২০১৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক সমাপ্তি বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে — পিসিইতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে, ৯৫ শতাংশের বেশি আজ অন্তত একটি পাশের সনদধারী। শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির হারের বিস্ফোরক প্রবৃদ্ধি এবং অধিকমাত্রায় সমাপনী পরীক্ষা পাশের বিচারে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি অনেকটাই নজরকাড়া।
এই অর্জন এর পিছনে অবদান ছিল ১৯৯০ এর দশকের একাধিক সামাজিক উদ্ভাবনী নীতির। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে “খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা” এবং মাধ্যমিক স্তরে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যে উপবৃত্তি প্রকল্প শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টি পরিবর্তনে সফল হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কম খরচে ও আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তি পরীক্ষা (পিএসসি) চালু করে — প্রাথমিক চক্রের শিক্ষা সমাপ্তি নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ গ্রেডের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তীত বছরগুলোতে প্রাথমিক সমাপ্তির হারে একটি নাটকীয় প্রবৃদ্ধি ঘটে।
সফলভাবে স্কুলবয়সী শিশুদের উপস্থিতি ও তালিকাভুক্তি হারের প্রবৃদ্ধি এবং স্কুলব্যবস্থা সম্প্রসারণ সত্ত্বেও শিক্ষার মান বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে| বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্ধেকের বেশি দশ বছর বয়সী বাংলাদেশি পড়ুয়া স্কুলে পড়ায় দক্ষ নয়, এবং ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ নেই।
শিক্ষা এবং শেখার মধ্যে অসঙ্গতি
জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংস্থা, ইউনেস্কো, দ্বারা প্রকাশিত ২০১৩ সালে গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্ট “শিক্ষা এবং শেখার : সকলের জন্য গুণমান অর্জন” প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষায় প্রবেশাধিকার ও অশগ্রহনের হারের ব্যাপক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে। তার পাশাপাশি একটি আসন্ন সঙ্কট বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সেটা হলো “শেখার সংকট” (লার্নিং ক্রাইসিস)। এমডিজি পরবর্তী ২০১৫-২০৩০ সময়ের এসডিজি ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতি হিসাবে ইউনেস্কো বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারকদের স্কুলে নিবন্ধনের পাশাপাশি “শ্রেণী কক্ষে শেখার ও স্বাক্ষরতা বিষয়ে মনোযোগ বৃদ্ধির সুপারিশ করে”।
একই সময়ে শিকাগো বিশ্ববিদালয় থেকে প্রকাশিত “কম্পারেটিভ এডুকেশন রিভিউ” জার্নালে আমার লিখিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ বের হয় যার বিষয়বস্তু ছিল “গ্রামীণ বাংলাদেশে শিক্ষায় অংশগ্রহণ এবং সাক্ষরতা অর্জনের অসঙ্গতি”[3]। ২০১৫ সালের এই প্রবন্ধ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার ঘাটতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। ১০-১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক মানের ন্যূনতম গণনার যোগ্যতা বিচারে একটি বিশাল অসঙ্গতি ফুটে উঠে – দেখা যায় যে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে একটি বছর সমাপ্তি সাপেক্ষে সংখ্যাতাত্ত্বিক দক্ষতার বৃদ্ধি হয় মাত্র ৬.৩ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন ধারার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম-বেশী এই ঘাটতির শিকার —প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণিতে প্রমোশন অনুপাতে শেখার প্রবৃদ্ধি আশাজনক নয় – অন্যভাবে বলতে গেলে গ্রামীণ বাংলাদেশের সরকার পরিচালিত মাধ্যমিক স্কুলগুলোর “লার্নিং প্রোফাইল” দুর্বল।
সাম্প্রতিক সময়ের সরকারি তদারকিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী “লার্নিং প্রোফাইলে” তেমন বড়ো কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতি দুই অন্তর “জাতীয় ছাত্র মূল্যায়ন” (এনএসএ) সমীক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের বাংলা পড়ার এবং মৌলিক পাটিগণিত সক্ষমতার মূল্যায়ন করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, ২০১১ থেকে ২০১৭ এর মধ্যে সমাপ্ত মূল্যায়ন এর ফলাফল বিবেচনায় তেমন কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়৷ উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালের এনএসএ সমীক্ষায়, ৫ম শ্রেণীর ৫৬শতাংশ শিক্ষর্থীর অর্জন ছিল “মৌলিক” বা “বেসিকের নীচে” স্তরে।
পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের “শেখার দারিদ্র্যতা” (“লার্নিং পভার্টি”) সামষ্টিক মূল্যায়নে আমাদের শিক্ষা দুর্যোগের ব্যাপ্তির এর প্রমান মিলে। এই সূচক অনুযায়ী বাংলদেশে স্কুলে যাচ্ছে এমন ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকই প্রাথমিক স্তরে ন্যূনতম মানের বিচারে একটি গল্প পড়তে অক্ষম। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে, আনুমানিক লার্নিং পভার্টির হার ৫৮ শতাংশ, তুলনামূলক বিচারে মালয়েশিয়ায় যা কিনা মাত্র ১২ এবং এবং শ্রীলঙ্কা ১৫ শতাংশ।
শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন এবং পরবর্তী শ্রেণিতে অন্তৰ্ভুক্তি সাপেক্ষে শেখার হারের অপর্যাপ্ত প্রবৃদ্ধি আমাদের গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্নিহিত গভীর সঙ্কটের প্রতিফলন। পাশের হার উচ্চ এবং জিপিএ-৫ এবং ডিগ্রীধারির সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না কর্মদক্ষতা। এর মূল কারণ হল প্রাথমিক স্তরে ন্যূনতম দক্ষতা শূন্য ও জ্ঞানহীন শিক্ষার অপরিকল্পিত এবং একতরফা প্রসার।
বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম দক্ষতা ও সাক্ষরতা জ্ঞানের সঙ্কটের (যাকে বিশ্ব ব্যাংক বলছে “লার্নিং ক্রাইসিস”) কারণ একাধিক| এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষক স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত শিক্ষা বাজেট, অবকাঠামো ঘাটতি এবং শিক্ষাখাতে অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য।
শিক্ষক স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত শিক্ষা বাজেট এবং অবকাঠামো ঘাটতি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দুই দশকে (১৯৭০-১৯৯০) পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ শিক্ষা বিনিয়োগকে পুঁজি করে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক চমক সৃষ্টি করে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং হংকং – এই দেশগুলোতে শিক্ষামুখী উন্নয়ের বহুল সমাদৃত মডেলের মূলে ছিল রাষ্ট্র চালিত মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার। এই ধারার অনুসরণে অপেক্ষাকৃত কম উন্নয়নশীল দেশ যেমন কিনা ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া খুব অল্প সময়ে শিক্ষা ও অর্থনীতি দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ১৯৭০র দশকে ইন্দোনেশিয়ার ৬১,০০০ টিরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন-নির্মাণ প্রকল্প। এই দেশগুলোতে সরকার সব সময় শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং জাতীয় আয় অনুপাতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ এবং বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
কিন্তু উন্নয়ের এরকম আঞ্চলিক সাফল্যের অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করে ১৯৭১-২০২১ সময়ে বাংলাদেশর শিক্ষা ব্যাবস্থা অগ্রসর হয় অনেকটাই উল্টো পথে। ১৯৪৭-১৯৭১ কালীন সৃষ্ট শিক্ষাব্যাবস্থা বৈষম্যে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দেয়[4]। কিন্তু অধিক সংখক নতুন সরকারি বিদ্যালয় নির্মাণের পরিবর্তে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ১৯৭০এর দশকের গোড়ার দিকে কেবল ৩৭০০০ এরও বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তী দশকগুলোতে জনসংখ্যার অনুপাতে সরকারি স্কুলের যথেষ্ট প্রসার ঘটেনি। এই ঘাটতি পূরণ করতে ব্যক্তি মালিকানায় ব্যাপক হরে স্থাপিত হয় বিভিন্ন ধারার বেসরকারি বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। সাময়িকভাবে এই বহুমুখী ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি করলেও পরবর্তীতে তা নতুন সংকটের সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার চার দশক পরে ২০১৩ সনে প্রায় ২৬১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখেরও বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়।
কেবলমাত্র জাতীয়করণের মধ্যে দিয়ে মূল অবকাঠামোগত অসামাঞ্জস্য ও বিদ্যমান ঘাটতিগুলো পূরণ হয়নি। একদিকে জিডিপি অনুপাতে শিক্ষকদের বেতন কম, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাপেক্ষে শিক্ষকের স্বল্পতা। উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে শিক্ষার্থী মাথাপিছু শিক্ষকের সংখ্যা বাংলাদেশে সর্বনিম্ন – মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ৪৫ জন ছাত্রকে সামলাতে হয়। শিক্ষকের মান ও সংখ্যার অপর্যাপ্ততা – এই দুই সংকট সার্বজনীন শিক্ষার নিম্নগতির অন্যতম কাঠামোগত কারণ। ইউনেস্কোর প্রস্তাবিত জিডিপির ৪-৬ % ব্যয় বরাদ্দের বিপরীতে বাংলাদেশর শিক্ষায় ব্যয় জিডিপির ২.১% যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় কম[5]। শিক্ষা ব্যয়ের কত অংশ অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে আসে, সেই পরিসংখ্যানও হিসাবহীন।
বৈদেশিক রেমিট্যান্সের স্থির প্রবাহ, তৈরী পোশাক রপ্তানি আয় এবং অর্থনীতির স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির হারের – এসব কিছুর বিবেচনায় অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। অথচ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক উদ্বৃত্ত এবং শিক্ষা বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, আমাদের শিক্ষা খাতে রয়েছে ব্যাপক বাজেট ঘাটতি। অতীতের তুলনায় মোট শিক্ষা ব্যয়ে বৈদিশিক সহায়তার অংশ ইতিমধ্যেই কমে দাঁড়িয়েছে ৬%। দেশব্যাপী সরকারি বিদ্যালয়ের অপর্যপ্ততা এবং সরকার ভর্তুকিপ্রার্প্ত (এমপিও) স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্বল্পতা শিক্ষা অর্থায়নের ক্রমবর্ধমান ঘাটতিরই প্রতিফলন।
শিক্ষাখাতে অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য
শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দর পাশাপাশি রয়েছে ব্যয়ের অস্বচ্ছতা ও অকার্যকরিতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সামগ্রিক দুর্নীতি ও অদক্ষতা। মানসম্পন্ন শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে রাজনীতিকরণের সংস্কৃতি শিক্ষাখাতে বাড়তি সংকট সৃষ্টি করে। বিগত দশকে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মধ্যে জবাবদিহিতার অবনতি এসব সমস্যা সমাধানের পথ আরো সংকুচিত করেছে।
সীমিত সরকারি বরাদ্দের অপব্যাবহার ও অপচয় এবং ব্যাবস্থাপনায় সুশাসনের অনুপস্থিতি আরেকটি কৃত্রিম শিক্ষা সংকট সৃষ্টি করেছে যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের ঘাটতিতে/ অপ্রতুলতা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, অনিয়ম এবং ব্যাপক দুর্নীতি – সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষকদের মান নিন্মগামী। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জরিপের উপাত্ত অনুযায়ীই, মাধ্যমিক স্তরের মাসিক পে-অর্ডার (এমপিও) তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারীদের শিক্ষক নিয়োগের জন্য ৩.৫০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়।
গ্রামীণ বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিশুই শিক্ষার জন্য বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে। মাঠ পর্যায়ের গবেষনায় দেখা গেছে যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ বেতনভোগী কর্মীদের মধ্যে শিক্ষক অনুপস্থিতির হার সর্বাধিক। শিক্ষকদের কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি এবং প্রশিক্ষণ ও কর্মদক্ষতাজনিত কাঠামোগত সমস্যা উপেক্ষা করে জাতীয়করন পরবর্তী সময়ে শিক্ষামানে কোনো বড়ো রকমের পরিবর্তন আসেনি। “সবার জন্য শিক্ষা” কর্মসূচির অর্জন বিদ্যালয়ে নিবন্ধন ও সমাপনী পরীক্ষা পাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সার্বজনীনভাবে শিক্ষার মান নিম্ন যার প্রমান মিলে শিক্ষা এবং শেখার অসঙ্গতির মধ্যে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এই ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারী মূল্য দিতে হয়েছে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে। এক হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষায় মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫৮% বোঝা বহন করে স্কুলগামী শিশুদের পরিবারগুলো। ইউনেস্কোর সমীক্ষা অনুসারে, সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলি সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের তুলনায় বইয়ের জন্য কয়েকগুণ বেশি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য দরিদ্র পরিবারের তুলনায় ১৫গুণ বেশি প্রাইভেট টিউশনে ব্যয় করে। এর সামষ্ঠিক ফলাফল হলো শিক্ষাখাতে সামাজিক বৈষম্য এবং শহুর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে শিক্ষা মানের ব্যবধান বৃদ্ধি।
ভ্রান্ত শিক্ষা নীতি, অকার্যকর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ব্যর্থতা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একটি কার্যকর ও প্রগতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার ১৯৭২ সালে ডাঃ কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে জাতীয় কমিশন গঠন করে যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়। ১৯৮৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে আরো পাঁচটি নতুন শিক্ষানীতি হয়। এই নীতিগুলির মধ্যে খুব কমই শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও উন্নতি আনতে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষে গঠিত ২০০৯ সালের শিক্ষা কমিশন বেশ কিছু পরিবর্তনের পর ২০১০ সালে আরো একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রকাশ করে। কিন্তু প্রস্তাবিত নীতির অধিকাংশই এখনোও অকার্যকর রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের মধ্যে আট বছরের প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা এবং এই লক্ষ অর্জনে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় ৬, ৭, এবং ৮ অন্তর্ভুক্ত করার কথা। ‘সকলের জন্য শিক্ষা’র আন্তর্জাতিক কার্যক্রমে শিক্ষা ব্যয়ের সুপারিশকৃত মাত্রা বিবেচনায় প্রেক্ষিত (২০১১-২১) পরিকল্পনার সময়সীমায় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশে বৃদ্ধি করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটাই হয়নি।
২০১০ সালের শিক্ষা নীতির এক দশক পরেও একদিকে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, অন্যদিকে আট বছরের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১০ নীতিমালা অনুসারে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত হবার কথা ১:৩০। অথচ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৩৭, মাধ্যমিক স্তরে ১:৪৫। শিক্ষক সংখ্যার সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে অযোগ্য শিক্ষকের অপার্যপ্ততা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক সূত্র মতে ৪৬% মাধ্যমিক শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না।
২০১০ সনের শিক্ষা কমিশনকে পাশ কাটিয়ে ও কোনো উম্মুক্ত আলোচনা ছাড়াই বাস্তবায়িত হতে চলেছে নতুন পাঠ্যক্রম /সিলেবাস। অতি সম্প্রতি ২০২২ সালে নীতিমালা সংস্কার করা হচ্ছে যার মূল ভিত্তি হলো একটি যোগ্যতা-ভিত্তিক (কমপিটেন্সি বেসড) জাতীয় স্কুল পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং একই সাথে প্রাথমিক ও জুনিয়র মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার বদলে থাকবে বছরব্যাপী শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং দক্ষতার মূল্যায়ন। প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি এবং অযৌক্তিকভাবে পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করার সংকৃতির বন্ধর জন্যে ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে চলেছে এই নতুন পাঠ্যক্রম।
মূল লক্ষ হচ্ছে অর্থনীতি-বান্ধব শিক্ষা নিশ্চিত এবং একুশ শতকের উপযোগী কর্মশক্তি গড়ে তোলা। উচ্চ-বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা অর্জন যেমন কিনা কাঠের কাজ, গ্রাফিক ডিজাইন, গাড়ির মেকানিক্স, চাইল্ড কেয়ার এবং প্লাম্বিংয়ের মতো বিকল্পগুলোর বৃত্তিমূলক বিষয়। কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ প্ৰাধান্য পেয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতার বিচারে এই পরিবর্তনগুলো অনেকখানিই (অনেকটাই?) আকস্মিক ও শিক্ষা প্রশাসনের সক্ষমতা সাপেক্ষে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিগত ঘাটতি উপেক্ষা করে অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী পাঠসূচির সংস্কার হবে হিতে বিপরীত। যেখানে কার্যকর ও ন্যূনতম সাক্ষরতাই নিশ্চিত করা হয়নি, জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের বিশাল ঘাটতি এবং সরকারি বিদ্যালয়ের অভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর শিক্ষা নির্ভর করছে অনিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা ব্যাবস্থার ওপর, তখন পাঠসূচিতে কম্পিউটার কোডিং চালু শিক্ষক ও শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা ছাড়া কিছু নয়। সুবর্ণজয়ন্তীতে শুধুমাত্র পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা সংকট মোকাবেলা বিদ্যমান বাস্তবতার একটি সংকীর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়নের প্রতিফলন। সংলাপ, সুশীল ও নাগরিক সমাজকে পাশ কাটিয়ে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এরকম নীতির একপেশী নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে একটি দৈততা সুস্পষ্ট : একদিকে নীতিমালার বিপরীতে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় সর্বস্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সরকারি প্রতিশ্রুতির প্রতি নাগরিকদের আস্থাহানি ঘটেছে, আর্থিকভাবে সক্ষম জনগোষ্ঠী ব্যাক্তিখাতের বেসরকারী শিক্ষার দ্বারপ্রান্ত হচ্ছে যা কিনা শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে ২০১১ জাতীয় শিক্ষা কমিটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ২০২২ এর একপাক্ষিক ঝটিকা সংস্কার নীতি প্রণয়নে সংকুচিত জনপ্রতিনিধিত্ব ও গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্বের বিষয়ে নতুন উঠছে। ১২ বছর আগে শিক্ষার সংকট নিয়ে ৫ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নাগরিক সমাজের পক্ষে যেই ৯ দফা প্রস্তাব করেছিলেন সেটাও পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে। এক অর্থে এসব কিছুই নীতি প্রণয়নে অতীতের গাফিলতি এবং দায়বদ্ধহীনতা সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার পরিচয়।
নীতি পরিবর্তন ও বাস্তবায়ন ব্যর্থতার এবং এর মূল নীতি থেকে বিচ্যুতর একটি বড় কারণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং দৃশ্যমান কিংবা জনপ্রিয় খাতে অর্থ অপচয়। এর একেরটি দিক হলো ‘ডায়গনিস্টিক ফেইলার’ বা সমস্যা নির্ণয়ে ব্যর্থতা – অত্যাবশকীয় ও ভিত্তিগত দক্ষতা ঘাটতি উপেক্ষা করে উচ্চাভিলাষী ও বাস্তব বিবর্জিত লক্ষ্য নির্ধারণ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বর্ষে আমাদের লক্ষ্য দেশের তরুণ কর্ম শক্তিকে একুশ শতাব্দীর জন্য প্রস্তুত করা। এর জন্য প্রয়োজন ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম’ কর্তৃক শনাক্ত বিবিধ/ বহুমুখী দক্ষতার অর্জন। সুনির্দ্ধিষ্ট ভাবে বলতে গেলে এই তালিকায় রয়েছে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, যোগাযোগ দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান, অধ্যবসায়, সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা, বিশ্ব ও বৈশ্বিক সচেতনতা, স্ব-নির্দেশ, সামাজিক দক্ষতা, নাগরিক সাক্ষরতা, সামাজিক দায়িত্ব, উদ্ভাবন দক্ষতা এবং চিন্তা করার দক্ষতা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্ববতা হলো আমরা এখনো সার্বজনীনভাবে উনবিংশ শতাব্দী মানের সাক্ষরতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি। এই বিবেচনায় এবং বর্তমান প্রক্ষাপটে ২০২২ সালে পরিকল্পিত সংস্কার অনেকটা উচ্চাভিলাষী ও অবাস্তব।
উপসংহার
১৯৭১র রক্ষক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল সার্বজনীন গণগতমানের শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যর নিরসন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বর্ষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যাপক সম্প্রসারণ হলেও শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রসারে বাণিজ্য এবং শিল্পায়নে কাঠামোগত কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়লেও সাক্ষরতা, সংখ্যাগায়ন, গবেষণা এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সূচকে এশিয়ার উচ্চ-মধ্য আয়ের রাষ্ট্রর সাপেক্ষে বাংলাদেশ অবস্থান বিশ্ব র্যাঙ্কিংর নিচের/পিছনের সারিতে। সরকারি পরিকল্পনা ও নথিপত্রে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা অগগ্রযাত্রার এই অসঙ্গতি স্বীকৃত হলেও এর নিরসনে রাজনৈতিক ঐক্যমত ও ইচ্ছাশক্তির ঘাটতি রয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, গত এক দশকে প্রবর্তিত পাঠ্যক্রমের অনেক পরিবর্তন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের বর্তমান মানব উন্নয়ন অবকাঠামো অত্যন্ত ভঙ্গুর, যা কিনা বর্তমান পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন মডেলের সঙ্গেও সংঘাতপূর্ণ।
এই পরিপেক্ষিতে প্রস্তাবিত শিক্ষার্থী-মুখী নতুন পাঠ্যক্রম আশাজনক। তবে এর সুষ্ঠ বাস্তবায়নে প্রয়োজন একাধিক সম্পূরক সংস্কার — শিক্ষা প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন, শিক্ষাব্যাবস্থার অরাজনৈতিকরন, সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি ও বায়ের স্বচ্ছতা। এসব কাঠামোগত ঘাটতি উপেক্ষা করে নীতির বিক্ষিপ্ত পরিবর্তন ফলপ্রসূ হবেনা। বাংলাদেশের শিক্ষার নীরব সঙ্কটের শিকড় শিক্ষার ও রাজনীতি উভয়ের সাথে বিবিধভাবে সম্পৃক্ত। তাই সংকট নিরসনের প্রয়োজন মৌলিক ও বহুমুখী পদ্ধক্ষেপ, উদ্ভাবনী চিন্তা ও বর্ধিত পরিসরের কৌশল। তাহলেই নতুন পাঠ্যক্রম ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক প্রমাণিত হবে এবং ২০৪১ এর মধ্যে মেধা, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাসবায়নে সফল হবে ।
তথ্যসূত্র :
[1] Asadullah, M Niaz, Antonio Savoia and Wahiduddin Mahmud, 2014. “Paths to Development: Is There a Bangladesh Surprise?” World Development. Volume 62, October, Pages 138-154
[2] Asadullah, M Niaz & Chaudhury, Nazmul 2009. “Reverse Gender Gap in Schooling in Bangladesh: Insights from Urban and Rural Households,” The Journal of Development Studies, 45(8):1360-1380.
[3] Asadullah, M Niaz and Chaudhury, N. (2015) “The Dissonance between Schooling and Learning: Evidence from Rural Bangladesh”, Comparative Education Review. 59(3), 447-472.
[4] Asadullah, M Niaz (2010) “Educational Disparity in East and West Pakistan, 1947-71: Was East Pakistan Discriminated Against?” Bangladesh Development Studies, vol. 33(3), 1-46.
[5] Asadullah, M Niaz, Antonio Savoia and Kunal Sen (2020) “Will South Asia achieve the Sustainable Development Goals by 2030? Learning from the MDGs experience,” Social Indicators Research, 152, 165-189.
- এই প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় সুজন সম্পাদিত স্মরণিকা “পঞ্চাশের পথচিত্র” (৮ম জাতীয় সম্মেলন ২০২২)