মেট্রোরেল আধুনিক নগর যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। উন্নত বিশ্বে ১৫-২০ লাখের বেশি অধিবাসী থাকে, এমন আকারের শহরে মেট্রোরেলকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করলে আনুমানিক ৫০ লাখের বেশি অধিবাসী আছেন এমন সব শহরে এখনই মেট্রোরেল পরিকল্পনা করা উচিৎ। নগর পরিবহণ পরিকল্পনায় অযৌক্তিক ফ্লাইওভার করার আগেই মেট্রোরেল পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার দরকার ছিল। শুধু ঢাকায় নয় বরং চট্টগ্রাম সহ সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল এখনই দরকার।
ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। ঢাকা মেট্রোরেল চালুর জন্য সরকার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), নকশা প্রস্তুতকারী জাপানিজ প্রকৌশলীবৃন্দ, ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর প্রকৌশলী কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ নির্মাণ শ্রমিকদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
যৌক্তিকভাবে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে, মেগা প্রকল্প হিসেবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নে আমাদের যতটুকু সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে তাতে পরবর্তী রুট গুলো দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করা যাবে কি? নাকি আমরা সেই বিদেশি পরিকল্পনায়, বিদেশি ঠিকাদারিতে, বিদেশি ঋণে, বিদেশি কারিগরি সক্ষমতার ভিতরে গিয়ে দেখুন শুনুন কিনুন পর্যায়েই থেকে যাচ্ছি? অর্থাৎ মেট্রোরেল অপারেশন ও মেইন্টেনেন্সে, কারিগরি ম্যানেজমেন্টে কতটা প্রযুক্তি হস্তান্তর বা টেকনোলজি ট্রান্সফার হয়েছে? এই প্রশ্নটা আসা উচিৎ।
১০ বছর কাজের পরে আজ ২২ কিমির রুটের ১০ কিমি মেট্রোরেল উদ্বোধন হচ্ছে। এক বছর আগেই (১২ ডিসেম্বর ২০২১) উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক চলাচল করেছে। একবছরে উল্লেখযোগ্য কি কাজ হলো সেটাও বিবেচনা করা দরকার! কেননা এইসময়ে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে অনেক বেড়ে গেছে। ১০ কিলোর যায়গায় কেন শুরুতেই ২২ কিমি উদ্বোধন করা গেলনা? প্রকল্প বাস্তবায়নের এত ধীরগতির কারণ নির্ণয় করা দরকার। প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সাথে খরচের প্রভাব বা ‘কষ্ট ইমপ্যাক্ট’ নিয়ে কি ডলার সংকটের সময়েও কি আমরা ভাবিত নই!
যেখানে ঢাকায় জালিকার মত বিস্তৃত শত শত কিলোমিটার (১২৮ কিমি পরিকল্পনাধীন) মেট্রোরেলের দরকার সেখানে মাত্র ১০কিমি মেট্রেরোল উদ্বোধন করে বিশাল রাজনৈতিক কৃতিত্ব না নিয়ে বাদবাকি মেট্রো রুটগুলো বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়া চাই। সবারই মনে রাখা উচিৎ প্রকল্পটা জনগণের অর্থে এবং জাতীয় ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তাই এখনো সাশ্রয়ী থাকতে পারা, দ্রুততার সাথে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে পারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাস্তবতা হচ্ছে, এই সময়ে যে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকলেই মেট্রোরেলের প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন থাকত, কেননা প্রকল্পগুলো দাতা সংস্থা পুশড! দক্ষিণ এশিয়ার বহু শহরে বিগত এক দশকে বিদেশি প্রযুক্তির মেট্রো রেল এসেছে। বিশ্বের মেট্রোরেল চলাচলকারী শহরের তালিকায় ঢাকা একটা নতুন শিশু, একে সযত্নে বাড়তে দিতে হবে দ্রুত। আমাদের সাথে শুরু করে ভারত ও পাকিস্তানের কিছু শহরে আমাদের চেয়ে কম খরচে, ১-২ বছর আগেই কয়েকগুণ দীর্ঘ মেট্রোরেল উদ্বোধন হয়েছে। ফলে তৃপ্তিতে নিমগ্ন না হয়ে, আমাদের ‘লার্নিং কার্ভ’কে শার্প করার দরকার অবশ্যই আছে। দিনশেষে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান, সাশ্রয়ী গণ-পরিবহণ এবং যাত্রী ভোগান্তি কমানোই মুখ্য।
মেট্রোরেল একটা টেকসই যাত্রা। নগর পরিবহণে মেট্রো রেল ১৫০ বছর পুরানো হলেও, আমাদের ঢাকার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ বায়ুদূষণের ঢাকা শহরে মেট্রোরেল পরিবেশ বান্ধব। তবে তেল ও কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দিয়ে ট্রেন চালালে তাকে শতভাগ পরিবেশ-বান্ধব বলা চলে না। সরকারকে সবুজ বিদ্যুৎ দিয়ে মেট্রো চালানো পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে হবে।
দুই
মেট্রো চলাচলকারী রুটে মেট্রোরেল যানজটের বিপরীতে স্বস্তি আনবে অবশ্যই। কিন্তু মোট ট্রাফিক কমিউটেশনের অনুপাতে মেট্রোরেলের ক্যাপাসিটি অনেক কম। বাসের তুলনায় ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ, ভারত পাকিস্তানের তুলনায় ভাড়া প্রায় ৩ গুণ বেশি হচ্ছে বলে, ঢাকার মেট্রোরেল অভিজাত পরিবহণ হয়ে থেকে যেতে পারে। পাশাপাশি একই রুটের ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কিছু নিয়ন্ত্রণ বা রেস্ট্রিকশন না আনলে পরিস্থিতির সাধারণ উন্নতি আশা করা যায়, অভাবনীয় উন্নয়ন আশা করা যায় না।
সরকার সেসব মেগা প্রকল্প করেছে তার মধ্যে মেট্রোরেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দরকারি এবং টেকসই একটি প্রকল্প। তথাপি পরিবহণ মাধ্যম বলে, একটা নগর পরিবহণের অভিজাত থাকার চেয়ে গণ হয়ে উঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মেট্রোরেলের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে। ইন্সটিটিউট অব প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টও (আইপিডি) মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর দাবি করেছে। আমাদের দেখতে হবে, বর্তমান ভাড়ায় ও রুটে আমাদের শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষের নগর যাতায়াতের চাহিদা ও আর্থিক সক্ষমতাকে মেট্রোরেল এড্রেস করবে কিনা! যদি না করে, ভাড়ার বিষয়টা দ্রুত সুরাহা করা হোক।
মেট্রোরেলের ভাড়া ঢাকার শ্রমজীবী মানুষ, রপ্তানিমুখী ও তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিক, ভাসমান শ্রমিক, নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্তের দৈনিক উপার্জনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে মেট্রোরেলের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। মেট্রোরেল শুধু উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং অভিজাত লোকদের পরিবহন হিসেবে গড়ে উঠলে ঢাকার যানজট উল্লেখযোগ্য হারে কমবে না।
তিন
ডলারে খরচের হিসেবে ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় সমসাময়িক নির্মিত ভারতের মেট্রোর সাড়ে চার গুণ। ভারতের মেট্রো আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ওভারহেড মিক্সড।আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোর নির্মাণ খরচ ওভারহেড মেট্রোর চেয়ে বেশি। তাই শুধু ওভারহেড মেট্রো হিসেবে কিমি প্রতি খরচে বাংলাদেশের প্রকৃত ব্যয় ভারতের পাঁচ গুণের কাছাকাছি।
৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষ্মৌ মেট্রো নির্মাণ শুরু করা হয়েছে ২০১৪ সালে। এর প্রায় ১০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪ স্টেশনের ১০টি মাটির নিচে। ২০১৭ সালে উদ্বোধন-কৃত মেট্রোটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আহমেদাবাদ মেট্রোর নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮২ কোটি ডলার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ৫ কোটি ছয় লাখ ডলার। এছাড়া নাগপুরে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়বে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। ( সূত্র- কস্ট অব কনস্ট্রাকটিং মেট্রোরেল ইন ইন্ডিয়া ভার্সেস ঢাকা মেট্রো, ডিএমটিসিএল প্রতিবেদন)
বিপরীতে উত্তরা-মতিঝিল রুটে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। ১ কিমি দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ৩৮০ কোটি ডলার। যেহেতু এখনও ১০ কিমি টেস্ট ড্রাইভ ও উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত নয় তাই ব্যয় আরও বাড়তে পারে, এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে বলে তারও একটা প্রভাব থাকতে পারে। অর্থাৎ কিমি প্রতি ঢাকা মেট্রোর ন্যূনতম খরচ হচ্ছে ১৭ কোটি ডলার, যা ভারতের অন্তত সাড়ে চার গুণ। মেট্রোরেল মূলত সরকারি সড়কের উপর দিয়েই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, ফলে ভূমি অধিগ্রহণের অস্বাভাবিক খরচ এবং বেসরকারি অবকাঠামোর সত্য-মিথ্যা ক্ষতিপূরণের দুর্নীতিকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে।
উপকরণ, মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তির সবকিছুই আমদানি নির্ভর বলে বাংলাদেশের যেকোনো হাইটেক নির্মাণ খরুচে। কিন্তু তাই বলে একই সাথে কিংবা পরে কাজ শুরু হওয়া ভারতীয় প্রকল্পের প্রায় ৫ গুণ খরচ অবশ্যই যৌক্তিক নয়। ভারতের মেট্রো প্রযুক্তিও কিন্তু বিদেশি, যেমন কানাডিয়ান বোর্মার্ডীয়ার, রাশিয়ার রোটেম, চাইনিজ ও জাপানি মেট্রো আছে সেখানে, কিছু ক্ষেত্রে কোচগুলোর স্থানীয় সংযোজন করা হয় সাভলি ও চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রেটেড কোচ ফ্যাক্টরিতে। ভারতের ফ্যাক্টরিতে সংযোজিত হচ্ছে বলে খরচ ভারতের মেট্রোর খরচ কিছুটা কম হবে, তাই বলে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মেট্রোর ৫ গুণের অস্বাভাবিক খরচের যুক্তি দাঁড়ায় না। খরচ বেশি হচ্ছে বলেই মেট্রোর ভাড়াও বেশি থেকে যাচ্ছে, এটা ভাবাও অযৌক্তিক নয়।
মেট্রোর মত প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণ অবশ্যই গুরুতর বিষয়। মাত্র এক বছর আগেও যে ডলার ৮৬ টাকা ছিল তা এখন ১০৭ টাকা। সুতরাং সময় ক্ষেপণ থামিয়ে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পকে দৃশ্যমান করা হোক। ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অর্ধেক উদ্বোধন হয়েছে, কিন্তু খরচ এখনই গিয়ে ঠেকেছে ৩৩ হাজার কোটিতে। ২০ কিমি একটা ওভারহেড মেট্রোরেল (আন্ডার গ্রাউন্ড মেট্রোর খরচ আরও বেশি) পদ্মা সেতুর চেয়েও কেন বেশি খরুচে এই উত্তর খুঁজতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
চার
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে যানজটে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিদিন যথাক্রমে ৩২ ও ১৭ লাখ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। দুটি শহরের যানজটেই বছরে নষ্ট হচ্ছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক বাজেটের পৌনে ৮ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকার গড় যানবাহন গতিবেগ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারের কম। তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর কাছে অতি পরিচিত। মেট্রোরেলে যানজটের বিপরীতে অর্থনৈতিক উপযোগ আসবে এবং শ্রমঘন্টা সাশ্রয় হবে। তথাপি মেট্রোরেল অসহনীয় যানজট ও বিশৃঙ্খল গণপরিবহনব্যবস্থা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেবে কিনা?- এই প্রশ্নের উত্তর সরকার হলফ করে দিতে পারবে না। সরকারের পরিকল্পনায় মেট্রোরেলকে ঢাকার ধনী এলাকার বাইরে খুব বেশি নেয়া হয়নি, ভাড়াও গরিবের নাগালের বেশ কিছুটা বাইরে। লাইন একের দুটিসহ মোট ছয়টি মেট্রো লাইনের মধ্যে একটির অর্ধেক উদ্বোধন দ্রুত যানজট কমিয়ে দিবে এমন প্রত্যাশা অযৌক্তিক। অতি দ্রুত অপরাপর রুটগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার।
অসহনীয় ও তীব্র ক্ষতির যানজটের জন্য জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মাত্রাতিরিক্ত চাপ, ঢাকায় কেন্দ্রীভূত অদক্ষ প্রশাসন, কেন্দ্রীভূত সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানই বহুলাংশে দায়ী। ডিজিটাল যুগেও রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, তদবির-নিয়োগ-বদলি-পদায়ন, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সব কাজই ঢাকাকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেলে ব্যক্তির নিজ জন্মস্থানে বেড়ে ওঠা, শিক্ষা নেওয়া, কর্ম করার, শ্রম বিনিয়োগ করার, উৎপাদন ও ভোগ করার, সেবা পাওয়ার ও বিনোদন করার সুযোগ তৈরি হয়নি। তাঁকে ঢাকা যেতে হয় সবকিছুর জন্য। ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর গুলোকে পরস্পর সংযুক্ত না করে শুধু ঢাকার ভিতরে মেগা প্রকল্প হলেই যানজট স্থায়ীভাবে দূর করা সম্ভব হবে, এমনটা বাস্তব নয়।
বরং আমাদের ঢাকার বাইরে কর্ম তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। শতভাগ ই-গভর্নেন্স প্রশাসন চালু করে, তদবিরভিত্তিক প্রশাসন পুরোপুরি রূপান্তর করে যানজটের দীর্ঘমেয়াদি পথ খুঁজতে হবে। একটি করে তথাকথিত ‘হেডঅফিসে’ বন্ধী থাকা যাবতীয় নাগরিক সেবা ওয়ার্ডে বা থানায় আনতে হবে। শহরে সেবা দেয় না, এমন সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকা থেকে সরাতে হবে। মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল ভর্তি ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক করতে প্রতি এলাকায় ভালো স্কুল গড়তে হবে। প্রতিটি থানায় ভাল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা গড়তে হবে। অর্থাৎ কেন্দ্রীভূত অফিসে, তদবিরের কারণে, হয়রারনির কারণে, ‘পরে আসুন’ সংস্কৃতির যেসব কারণে একবারের যায়গায় বহুবার, ছোট ট্রিপের যায়গায় দীর্ঘ ট্রিপ তৈরি হয় সেসব থামাতে হবে।
রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে ভাবতে হবে। কার্যকর স্থানীয় শাসন এবং ডিজিটাল প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা ও শাসনব্যবস্থা সচিবালয় বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে ঢাকার বাইরে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সেবা-চাকরি-নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে যাতে হবে। ব্যবসার, নগরায়ণের, কর্মের, শিক্ষার, স্বাস্থ্যের, সেবার, নিরাপত্তার; অর্থাৎ জীবনের সব ঘটনা ও প্রয়োজনের একমুখী ঢাকাকেন্দ্রিক স্রোত থামাতে হবে। তবেই উন্নয়ন টেকসই হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই!